মহিলাদের আয়কর

Writer – Md. Jillur Rahman

মহিলারা আজ আর পিছিয়ে নেই।সময়ের সাথে সাথে মহিলারাও আজ অনেক পেশায় নিয়োজিত। কেউ সরকারি- বেসরকারী চাকরিতে নিয়োজিত অথবা কেউ বা হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা। সংসার বা নিজের জন্য বাড়তি কিছু টাকা উপার্জন করে সংসারকে বাড়তি খরচের বোঝা লাঘব করার জন্য তারাও আজ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেছে। নিজের আয় বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই আয়করের আওতায় চলে আসেন। অনেকের কাছে আয়কর জিনিসটি ভীতিকর, আয়কর শব্দটি শোনার সাথে সাথে সবাই ভ্রক্ষেপ করেন।কিভাবে আয়করের হাত থেকে বাচঁবেন এই টেনশনে সবাই পড়ে যান।

আদৌতে আয়কর জিনিসটি কি? আয়কর দেয়া কাদের উপর প্রযোজ‍্য। বার্ষিক কত টাকা আয় হলে আয়করের আওতায় পড়তে হয়। আসলে আয়কর বা Tax প্রদান নিয়ে এত টেনশন করার দরকার নাই। আয়কর হচ্ছে একটি কর যা একজন ব‍্যাক্তির বা প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয়ের বা মুনাফার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়। আয়ের ধরন অনুসারে করের হার পরিবর্তন হয়।অর্থ‍্যাৎ একজন ব‍্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সারা বছর যে নীট আয় হয় তার উপর ধার্যকৃত কর। এখন প্রশ্ন হল কত টাকা আয় করলে আয়কর দিতে হয়।সবশেষ আয়কর নীতিমালা অনুযায়ী, পুরুষদের ক্ষেত্রে কারও যদি বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা বা তার কম হয় তাহলে মোট আয়ের উপর কোন আয়কর দিতে হবে না। নারীদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ শুধুমাত্র আয় করলেই নয় নির্দিষ্ট সীমা আয় সীমানা অতিক্রম করলেই আয়কর দিতে হয়।পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের কর দেয়ার ক্ষেত্রে আয়ের সীমা বা income range একটু বেশি হতে হয়।

একটি ছোট্ট উদাহরণের সাথে বুঝাতে পারলে বিষয়টি আরো সহজ হবে: জনাবা আইরিন ইসলাম বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত একজন সরকারি কর্মচারী এবং ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত অর্থবর্ষে তিনি নিম্নোক্ত হারে বেতন ভাতাদি পেয়েছেন:

মাসিক মূল বেতন ৫৬,৫০০ টাকা, মাসিক চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ১,১৩,০০০ টাকা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ১১,৩০০ টাকা, তিনি সরকারি বাসায় থাকেন। ভবিষ্য তহবিলে তিনি প্রতি মাসে ১৪,০০০ টাকা জমা রাখেন। ৩০ জুন ২০২৩ তারিখে ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদের পরিমাণ ছিল ১,০৮,৫০০ টাকা। কল্যাণ তহবিলে ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা প্রদান বাবদ প্রতি মাসে বেতন হতে কর্তন ছিল যথাক্রমে ১৫০ ও ১০০ টাকা। এছাড়াও তিনি একটি তফসিলি ব্যাংকের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে মাসিক ৫,০০০ টাকার কিস্তি জমা করেন।

২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাবা আইরিন ইসলাম এর মোট আয় এবং করদায় নিম্নে পরিগণনা করা হলো:

বেতন খাতে আয়ঃ টাকা,
মূল বেতন (৫৬,৫০০০ ১২ মাস) = ৬,৭৮,০০০

উৎসব ভাতা (৫৬,৫০০০ ২) = ১,১৩,০০০

ভবিষ্যত তহবিলে অর্জিত সুদ = ১,০৮,৫০০ (করমুক্ত)

চিকিৎসা ভাতা (১,৫০০×১২) = ১৮,০০০ (করমুক্ত)

বাংলা নববর্ষ ভাতা = ১১,৩০০ (করমুক্ত)
মোট আয় = ৭,৯১,০০০ মোট আয়

করদায় পরিগণনাঃ টাকা

প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হার = ০০

পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫% হারে = ৫০০০

অবশিষ্ট ২,৯১,০০০ টাকার উপর ১০% হারে = ২৯,১০০

মোট করদায় = ৩৪,১৫০

বিনিয়োগ জনিত কর রেয়াত পরিগণনা, বিনিয়োগের পরিমাণ টাকা

১। ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা (১৪,০০০ × ১২) = ১,৬৮,০০০

২। কল্যাণ তহবিলে চাঁদা (১৫০ × ১২) = ১,৮০০

৩। গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা (১০০ x ১২) = ১,২০০

৪। ডিপোজিট পেনশন স্কিমের কিস্তি (৫,০০০ × ১২) = ৬০,০০০

মোট বিনিয়োগ = ২,৩১,০০০

কর রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারণ:
(ক) ০.০৩ × ৭,৯১,০০০ = ২৩,৭৩০

(খ) ০.১৫ × ২,৩১,০০০ = ৩৪,৬৫০

(গ) ১০,০০,০০০ টাকা = ১০,০০,০০০
এই তিনটির মধ্যে যেটি কম = ২৩,৭৩০

এক্ষেত্রে- কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ২৩,৭৩০ টাকা।

প্রদেয় করের পরিমাণ (৩৪,১৫০ বাদ ২৩,৭৩০)= ১০,৪২০ টাকা। পরিশেষে দেখা যায় ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাবা আইরিন ইসলাম এর মোট প্রদেয় কর ১০,৪২০ টাকা  । তিনি এ চালান অথবা অনলাইন অন্য কোন অপসনের মাধ্যমে পরিশোধ করবে।

2 thoughts on “মহিলাদের আয়কর”

  1. আফসানা

    এতো সরকারি চাকুরী জীবিদের। বেসরকারি চাকুরী জীবিদের সম্পর্কে লিখুন।

Comments are closed.